Wednesday, December 24, 2014

চোরাবালি

'কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ও ভাই রে!'
মন্ত্রীমশাই হাসপাতালে,
ঘিরে রাখে ডাক্তার দলে;
আসলে তার রোগ তো কিছুই নাই রে!

'কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ও ভাই রে!'
মরণাপন্ন রুগীর তরে'
অজুহাতের পাত্র ভরে,
তার তো দেখি নেই যে কোনো ঠাই রে।

'কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ও ভাই রে!'
রাজনীতির এই  যাঁতাকলে
এমনধারা যদি চলে  
তুচ্ছ মোরা কোথায় তবে যাই রে।

'কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ও ভাই রে!'
লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু
(তবু) এই কথাটা ভুলি নিত্য
ক্ষমতার চোরাবালিতে সবাই তলাই রে।

Thursday, November 27, 2014

নারীর মুক্তি

বিশ্ব জুড়ে চলছে এক নির্লজ্জ, বিকৃত প্রতিযোগিতা;
কত নৃশংস, নির্মম হতে পারে নারী-অবমাননা।
খবর-কাগজ, সোশ্যাল-মিডিয়া কিংবা টিভির পর্দা,
দেখি সবেতেই হাজির তার বিরামহীন বার্তা।
নারী-প্রগতি, নারী-মুক্তি কপচানো নেতা যত,
নারীলাঞ্ছনা আসলেতে এক হাতিয়ারের মত।

ঘটলে এমন 'দুর্ঘটনা', নিন্দা আর সমালোচনা
প্রকাশ্যেতে সবাই করে, করে নিদারুন শোক
তবে কারা এই লাঞ্ছনাকারী? সবাই আসলে মুখোশধারী।
সুযোগ পেলেই মুখোশ খুলে বের করে দাঁত নখ

প্রচার-লোভী বুদ্ধিজীবি, পরজীবী সমাজসেবী
ঝগড়া করে, জাবর কেটে কাঁপিয়ে তোলেন বাড়ির টিভি
জানাই তাদের সবিনয়ে, রক্ষা করতে নারীর মান
এসব-ই কি করেছিলেন? বিদ্যাসাগর, রামমোহন

কঠিন এই সমাজ-ব্যাধি, সহজ নয়কো নারীর মুক্তি;
পুরুষ নারী নির্বিশেষে বুঝতে হবে অমোঘ যুক্তি।
ছোটো থেকেই প্রতি ঘরেই নারী যেন পায় সমান-মান,
শুধু এই 'শিক্ষা'-ই করতে পারে নারীলাঞ্ছনা-র অবসান।
এর অন্যথা হলেই জেনো সারবে না এই অসুখ-ভারী
তুমি আমি না পাল্টালে, পারবে না কোনো ক্রান্তিকারী।

Friday, October 03, 2014

শুভ বিজয়া

ঢাকে পড়ল কাঠি
প্রাণ পেল মাটি।

নতুন জামা গায়
কচি-কাঁচা ছুটে যায়।

বউ সাজে কলাগাছ
(চল) ঠাকুর দেখবো আজ।

আড্ডা জমজমাট
যেন চাঁদের হাট।

অঞ্জলি দিই সবে
জগতের ভালো ভেবে।

মানুষে দেবতা খুঁজি
কুমারী-দেবী পুজি।

ধুনুচি নিয়ে নাচ
(মাতে) পঁচাশি থেকে পাঁচ।

এলো বিদায়ের বেলা
এয়োর সিঁদুর খেলা।

রাগ দুঃখ ভুলি
(করি) বিজয়ার কোলাকুলি।

মা ভাসলো জলে
নীলকন্ঠ উড়ে চলে।

বলো দূর্গা দূর্গা
আবার এসো মা। 

Monday, September 22, 2014

মহালয়া

সবুজ ধানে ঢেউ খেলে যায়, পদ্মকলি হাই তোলে;
শিউলি ফুলের গন্ধ মাখা মিষ্টি হাওয়া দ্বার খোলে।

ফুড়ুত ওড়ে চড়ুই পাখি, শালিক লাফায় খড়ের চালে;
ধানের শীষে গঙ্গাফড়িং নাচছে যে কোন অচীন-তালে।

পূব-আকাশে সোনার বরণ, ঘাসের ডগায় হীরের ফুল;
কাশের বনে মাতন জাগে, ছলাত ছলাত নদীর কুল।

ধায় দেখো ওই রেলের গাড়ি তেপান্তরের বুক চিরে,
এখন ছুটি সব কাজেরই ঘরের মানুষ ঘর ফিরে।

আকাশ জুড়ে রামধনু ওই স্বপ্ন-লোকের কল্পনা,
পেঁজা তুলোর মেঘ এঁকে যায় আনকোরা সব আলপনা।

কোঁচড় ভরে শালুক তোলে নদীর ঘাটে এক মেয়ে,
নৌকা চলে উজান পানে আগমনীর গান গেয়ে।

আয় ছুটে আয় সবাই, মোরা আনন্দেতে গান গাই,
মা আসছেন মা আসছেন আর একটুও দেরী নাই।

ভোর বেলাতেই বেতারে'তে চির-নুতন 'বীরেন ভদ্র',
'আশ্বিনের শারদ প্রাতে' আকাশ জুড়ে মেঘ-ও-রৌদ্র।

পিতৃ-পক্ষ অবসান হলো এবার জাগবে মহামায়া;
দেবী-পক্ষের শুভ-সূচনায় মহাপূজার মহালয়া!


Thursday, July 17, 2014

মাওবাদী

অনেক কাল পরে এখানে এসেছে বহু-প্রতিক্ষিত 'পরিবর্তন'   
শরতের কুয়াশা-ভেজা রৌদ্রজ্জ্বল এক সুন্দর সকালের মত
মন ভালো করে দেওয়া একটা পরিবর্তন।
যেখানে থাকবে না কোন অন্যায়, স্বজন-পোষণ,
দুর্নীতি, সেচ্ছাচারিতা আর হিংসা;
মারামারি, ভেদাভেদ ভুলে তৈরি হবে সুখ-শান্তি-উন্নতির আবহ,
মানুষ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবে স্বর্গের আস্বাদ।    
 
তবে কেন দেখি প্রতিবাদের কন্ঠরোধ?
নির্লজ্জ ফুর্তির মোচ্ছবে চাপা পড়ে যায় আর্তের হাহাকার, 
হিংস্র শ্বাপদেরা ঘুরে বেড়ায় নির্ভয়ে;
অশ্রাব্য হুমকি-তে হাড় হিম করা আতঙ্কের স্রোত নামে শরীর জুড়ে
নির্যাতিতার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে রুদ্ধ বাতাস।
ক্লেদাক্ত পঙ্কিল রাজনীতি, ক্ষমতা ও ঔদ্ধত্যের কুম্ভীপাকে
নাভিশ্বাস ওঠে নিরুপায় শান্তিপ্রিয় মানুষের।  

কেউ কেউ অবশ্য বোঝাতে চায় -
আগেও এসব ছিল - অনেক বেশি 'মাত্রা'য়
তার 'প্রেক্ষিত'-ও ছিল অন্য।
তুচ্ছ এই ঘটনা-গুলো এত বড় পরিবর্তনের তুলনায় কিচ্ছু নয়
পরিবর্তনের গরিমা-কে কলঙ্কিত করার নিছক অপচেষ্টা মাত্র।
সেরা মোসাহেবরা পুরস্কৃত হয় বিবিধ সম্মানে
চাটুকার ছাড়া শাসক কতো অসহায় - পরিবর্তন কই এর?
পরিবর্তন এক্কেবারে যে হয়নি তাও নয়
তাইতো আজ প্রতিবাদীর নাম হয়েছে মাওবাদী।
 

Monday, June 16, 2014

ব্রাজিল ২০১৪

ফুটবল, ফুটবল, চলছে খেলা;
বাছা দেশ বাছা দল, তারার মেলা।
কেউ বলে নেইমার, কেউ মেসি-ফ্যান
সারাদিন তাই নিয়ে চলে ঘ্যান ঘ্যান;
কারো মতে জার্মানি, স্পেন কারো মতে
Football 2014
বেলজিয়াম, ঘানা আছে কারো সাথে।
পেলে নাকি মারাদোনা - কে সবার সেরা
তর্কের শেষ নেই যুক্তির ফেরা।
রাত নেই দিন নেই ঘুম নেই চোখে
সব কাজ ফেলে সব ফুটবল দ্যাখে;
পেনাল্টি ফ্রি-কিক্ -এ তেঁতে ওঠে মাঠ
ফেসবুক টুইটারে আড্ডা জমাট।
অফসাইড, হ্যান্ড-বল, ফাউল বিচ্ছিরি
হলুদ আর লাল কার্ড দ্যাখে ভুরি ভুরি।
লং-শটে ডিফ্লেক্ট, হেড দিয়ে গোল
কেউ হাসে কেউ কাঁদে কেউ করে গোল।
কেউ দেখি অনায়াসে গোল দিয়ে যায়
সারামাঠ ছুটে কেউ গোল নাহি পায়।
কেউ উল্লাস কেউ হাহাকার করে;
কেউ দেখি চুপচাপ - চোখে জল ভরে।
খোকা-খুকী, বুড়ো-বুড়ি - সবে ওঠে মেতে
আনন্দে ভেসে যায় যদি ট্রফি জেতে;
এত মজা এত খুশি কোথা পাবে আর
ফুটবল বেঁচে থাকো এসো বার বার।



Monday, June 09, 2014

তোমায় ভেবে

তোমায় ভেবে দিন যে আমার কাটে অফিস বাজার কিম্বা রাস্তা ঘাটে;
কাকভোরেতে ভেঙেছো মোর ঘুম, কখন জানি সূর্য্যি গেছে পাটে।

মন বসেনা একটা কোনো কাজে সদাই তুমি বসে মনের মাঝে
সামনে এসে একটু দাঁড়াও যদি, মিষ্টি হেসে রাঙিয়ে দু'গাল লাজে।

হাঁটলে নাহয় দুই পা আমার সাথে প্রাসাদ ছেড়ে তরুছায়া পথে
বললে নাহয় একটা দুটো কথা, ক্ষতি তোমার খুব কি হবে তাতে?

কালো হয়ে আসছে আকাশ কেমন, মনে হয় যেন বৃষ্টি নামবে জোরে
উতল হৃদয় স্নিগ্ধ শীতল হবে তোমার সঙ্গে ভিজব পরাণ ভরে।

সন্ধ্যা হলে কুলায় ফিরবে পাখি ঘুমের কোলে ভুলবে দুঃখ-সুখ
নীরব রাতের আকাশ জুড়ে শুধু, থাকবে জেগে তোমার চন্দ্র-মুখ।

আমার এখন নিদ্রা বিহীন রাত, একটু পরেই আবার সকাল হবে
তোমায় ভেবে দিন যে আমার কাটে, আসবে তুমি আমার কাছে কবে?



 

Monday, May 19, 2014

দেশের বিকাশ - ২

অনেক দিনের পরে, সবে ভাবে অবশেষে,
নয়া সরকার গড়ে; বিকাশ আসবে দেশে।

নেতা ভাবে সোত্সাহে সুযোগ এসেছে দ্বারে,
বিকাশ - খুঁড়োর কল, (আগে) চুষে খাই দেশটারে।

ব্যবসায়ী আশাবাদী - মুনাফা বাড়বে আরো,
কর ফাঁকি দাও তেড়ে, ভেজাল মিশিয়ে মারো।

কাজ নেইকো হাতে, বন্ধ যে কারখানা;
(তবু) শ্রেণীসংগ্রাম নামাবলী গায়ে শ্রমিকের জঙ্গীপনা

ঘুরপথে পাই চাকরি, করবো কেন কাজ?
মাইনে-টা তো প্রাপ্য - ঘুষ নিতে নেই লাজ।

টুকলি-ই সার বস্তু - পড়ে সময় নষ্ট ,
পাশ করাতে হবেই স্যার, নইলে পাবে কষ্ট।

মুখের ওপর ধোঁয়া ছাড়ি, রাস্তায় ফেলি থুতু,
নিয়ম মেনে চলতে গেলে পায়যে কাতুকুতু।

রাস্তাঘাট নোংরা করে সরকারে দেই দোষ;
প্রতিবেশীর সুখ দেখলে হয় বড় আফশোষ।

সবাই মিলে ফাঁকি দিলে বিকাশ আসবে কবে?
আলাদিন-ই শেষ ভরসা সরকার আসবে যাবে।

 

দেশের বিকাশ - ১

গঙ্গার জল বয় অবিরত, বাকি সব থেমে ছবির মত;
দমবন্ধ করা হাঁসফাঁস, কিভাবে হবে দেশের বিকাশ?

দুর্নীতি আর অপসংস্কৃতি, অচলায়তনের প্রতিকৃতি
নরমের যম, শক্তের দাস; কখনো কি হবে দেশের বিকাশ?

জাত-ধর্মের অন্ধ-নীতি, প্রাদেশিকতা, ঘৃণা, ভীতি;
কালো মেঘে ঢাকা রাতের আকাশ, কে করিতে পারে দেশের বিকাশ?

যায় দেখা ওই আলোক শিখা, সত্যি সেযে - নয় মরিচীকা;
হঠাত্ খুশির জন-উচ্ছাস, এবার হবে দেশের বিকাশ।

প্রতীক্ষার হল অবসান, জনতার তরে সেরা বরদান
নুতন সূর্য হয়েছে প্রকাশ, শুরু হয়ে গেল দেশের বিকাশ।
 

Tuesday, March 25, 2014

ভোট

হই হই করে ভাই এসে গেল ভোট, 
তাই দেখি দলে দলে পাকায় যে ঘোঁট।
সবে বলে, আমি সেরা বাকিসব বাজে, 
ভোট দিলে আমাদের, তবে দেবে কাজে। 
কংগ্রেস বলে- দেশে আসবে প্রগতি, 
তাই মোরে ভোট দিও নাহলেই ক্ষতি। 
এতদিন ধরে দেখো কি করেছে হাল,
দেশ গেল রসাতলে সামাল সামাল; 
এরপরে কেউ ওরে ভোট দেয় যদি
দেশ যাবে রসাতলে হাঁক ছাড়ে মোদী। 
মোদী রাহুল সব-ই এক দুজনেই পাজি 
অরবিন্দ-ই তাই আম আদমী-র বাজি। 
মুলায়ম, মমতা, মায়া আর জয়া; 
বলে সবে- আমি পাব জনতার দয়া। 
কে জেতে কে'বা হারে জানা যাবে পরে;
জনগণ ভোট দিও বিবেচনা করে।
ধনরাশি এত এত তবু মোরা দীন,
নেতা আর চ্যালা তার বাড়ে দিন দিন;
ভোটের আগে এসে তোসামোদ করে,
ডুমুরের ফুল দেখি ভোটে জেতার পরে;
দেশ গড়ো সাজা দাও এই সব শঠে, 
নিশ্চই ভোট দাও এবারের ভোটে।

Tuesday, March 04, 2014

সংগ্রামের পাঠ

আততায়ীর বুলেটে লুটায় দেহ রক্তে ভাসে ইন্সপেক্টর তাপস 
কলেজ ভোটের পাহারায় অবিরত করেনি সে কোনরকম আপস    

সকালবেলা বেরিয়েছিল অফিস  যেমন বেরোয় প্রতিদিন-ই হেঁটে 
সন্ধ্যায় ফেরে কফিনবন্দি দেহ ঠাকুরপুকুরে দোতলা বাড়ির গেটে 

নিঝুম পাড়ায় উপচে পড়ে ভিড়; বউ ছেলে মেয়ে, মাথায় পড়ে বাজ
এই রবিবারে সবাই যাবে পুরী ঠিক হয়েছিল সকালবেলা আজ 
শুভানুধ্যায়ীর সমবেদনার হিড়িক - সরকার দেয় চাকরির আশ্বাস
বিরোধীরা বলে শাসকের প্রশ্রয়ে এই বাংলায় অপরাধীর পৌষমাস  

রাজনীতির এই নোংরা রেষারেষি - বলি যায় কত তাজা নির্দোষ প্রাণ 
আর কত গুলো লাশের মিছিল হলে সাঙ্গ হবে এই রক্ত-স্নান?
শাসক-বিরোধী সবাই চায় জিততে, হারুক তাপস শত শত কালে কালে  
এই ব্যাপারে সব দল-ই একমত, রাজনীতি যেন থাকে রাজার হালে   

কেটে গেছে মাঝে অনেককটা দিন, মেয়ে এখন পুলিশে চাকরি করে
তিনটে প্রাণ-এর হৃদয়ে থাকে তাপস অন্য সবাই ব্যস্ত নিজের তরে

তাপসের বউ পাষাণ প্রতিমা আজ শক্ত চোয়াল মুষ্ঠিবন্ধ হাত  
বাঁধ মানে না চোখের নোনা জল - শূন্যতা দেয় সংগ্রামের পাঠ

Friday, February 21, 2014

২১-শে ফেব্রুয়ারি

কথা বলি গান গাই
ভাষা ছাড়া গতি নাই
ভাষা হোক তব ভালবাসা

যে ভাষা-ই বলি কেন 
আসল কথাটি জেনো 
মাতৃদুগ্ধ সম মাতৃভাষা

ভাষার জন্য লড়ে
প্রাণ বলি দেয় যেরে
তুচ্ছ সব মাতৃভাষা বিনে 

কখনো ভুলি না তারে
বীর ভাষা শহিদেরে
নমি সবে এই শুভ দিনে


 

Wednesday, February 12, 2014

দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ

ভারত আমার ভারতবর্ষ,                পরাধীনতার হাজার বর্ষ
          পেরিয়ে তুমি স্বাধীন হয়েছো অনেক বছর আগে। 
তবুও মোদের দুঃখ কত,                   লড়ছি সবাই অবিরত,    
           জীবনযুদ্ধে যুঝতে যুঝতে ফুঁসছি মোরা রাগে।
দেশ মাতাকে করে লাঞ্ছনা,               দেশ বাসীকে করে প্রতারণা  
            দস্যুর দল করছে শোষণ সেজে জনতার দাস। 
গান্ধী, সুভাষ, বল্লভ-ভাই,               বীর সেনানীর হিসাব যে নাই;  
            সবার সাধনা নষ্ট করেও মেটেনি তাদের আশ।
ভাইয়ে ভাইয়ে কভু-না মিলে;             মায়ের বোনের চোখের জলে
           পিছল হয়েছে সমাজের পথ অহরহ দিবা-নিশি।
ধর্মে ধর্মে করে হানাহানি,                গরিবের পেটে নাই দানাপানি
         তেলা মাথায় তেল দিয়ে সবে বেনিয়মে চলে ভাসি।       
হয়েছে সময় আবার জাগার              সময় এসেছে ঘুম ভাঙ্গাবার 
           এস লড়ি সবে ঘোচাতে এদেশে দুর্দশা-দুর্নীতি। 
আসবে দ্বিতীয় স্বাধীনতা,                 অমর শহীদ পাবে মান্যতা 
             বিশ্বমাঝে ভারত পাবে সম্মান পরিচতি।

Monday, January 13, 2014

লেখা-লিখি

অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম আনেকদিন কিছু লেখা হয়নি।কিছু একটা লিখি।কিন্তু কি লিখবো সেটাই ঠিক করতে পারছিলাম না। যারা স্বভাব-লিখিয়ে তারা তো ইচ্ছে হলেই জম্পেশ লিখে ফ্যালে।অনেক-টা মেসে থাকা বেকার ব্যাচেলর ছেলের খাওয়া আর ঘুমোনো-র মতো। 

আজকাল অবশ্য ওইসব স্বভাব লিখিয়েদের সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য, বা ঠিক পাল্লা না দিলেও একটা মোটামুটি প্রতিযোগিতা-য় ফেলে দেওয়ার জন্য কিছু উপায় এসে গেছে। ঠিক-ই ধরেছেন - আমি ওই 'ব্লগ', 'টুইটার', 'ফেসবুক' এইসবের কথাই বলছি।এগুলো-তে লোকে আজকাল ঠিক কি-ই যে না লিখছে তা বলা বা বোঝা খুব মুশকিল।সারা পৃথিবীর কয়েক কোটি মানুষ একসাথে লিখছে, লিখে-ই যাচ্ছে। অবশ্য তাদের বেশির ভাগ পড়ার উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। 

"আমি লিখতে খুব ভালোবাসি। প্রতিদিন প্রায় ৩ ঘন্টা লিখি - মেইন-লি ফেসবুক আর টুইটার-এ"
 

বিভিন্ন গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, কবিতা, গবেষনা, খবর ইত্যাদি তো আছে-ই। মানুষ তার প্রতি মুহুর্তের নানা রকম অভিজ্ঞতা : ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ভয় পাওয়া, খানা-পিনা, বেড়ানো, সিনেমা দেখা, গান শোনা, বই পড়া, খেলাধুলো, অসুখ-বিসুখ, সমস্যা- সমাধান, আইন-আদালত, পাপ-পুণ্য, আদেশ-উপদেশ, হাসি-ঠাট্টা, বনধ-হরতাল, আন্দোলন-অবরোধ, কলহ-ঝগড়া, প্রেম-বিরহ, এমনকি হারানো-প্রাপ্তি, বিবাহ-বিচ্ছেদ কিছুই বাকি নেই - বিষয় বৈচিত্রের কোনো শেষ নেই - অফুরান উতসাহে লিখে যাচ্ছে - প্রায় রিয়েল-টাইম।সকালে কাগজওয়ালা কাগজ দেয়নি, বাড়ির ঠিকে ঝি আসেনি, দুধওয়ালা দুধ দেয়নি, অটো-তে দু-টাকা গচ্চা গেছে খুচরো না থাকায়, ট্রাফিক সিগন্যাল-এ গান শুনে মেজাজ বিগড়ে গেছে, নরেন্দ্র মোদী না রাহুল গান্ধী, নাকি অরবিন্দ কেজরিওয়াল - কে এবার প্রধান-মন্ত্রী হবে, অফিস-এ পারফরমেন্স-রেটিং ভাল হয়নি, তাই 'বস'-এর মুন্ডু-পাত, অকারণে ট্রাফিক সিগনালে কেস খাওয়া, সেই কবেই 'ফ্ল্যাট' বুক করেছেন কিন্তু প্রোমোটার এখনো পজেশন দেয়নি, 'ট্রাভেল রেডি' কিন্তু 'অনসাইট অপরচুনিটি' পাচ্ছি না, এরকম আরো কত কিছু - জীবন যাপনের যাবতীয় খুঁটিনাটি - সে যত-ই ছোট বা তুচ্ছ হোক না কেন - সব-ই এখন পোস্ট হয়ে যায়।নানান আচার অনুষ্ঠান-এর নিমন্ত্রন-ও আজকাল অনলাইন-এ হয়ে যাচ্ছে। আমার এক সহকর্মী তো তার বিয়ের সচিত্র ধারাবিবরণী দেওয়া শুরু করেছিলো। রক্ষে যে 'হানিমুন'-এর আগেই তাকে থামানো গেছে। নাহলে গিনেস বুক-এ নাম-টা পাক্কা উঠত; উঠতই।

ক্যামেরা, মোবাইলের বিক্রি-ও হু-হু করে বেড়ে গেছে।ডিজিটাল ক্যামেরা-তে আটকে না থেকে এখন 'এস-এল-আর'-এ মনোনিবেশ করেছে। বেসিক ফোন ছেড়ে স্মার্ট ফোনের বাজার।আগে লোকে বেড়াতে যেত ছুটি কাটাতে, শরীর সারাতে বা নতুন কিছু দেখার নেশায়। এখন অধিকাংশ-ই হয় অনলাইন পোস্ট করার জন্য।আমি কি দেখছি সেটা খুব একটা কাজের কথা নয়, বাকিরা দেখুক আমি কি দেখছি।আমার এক বন্ধু বেড়াতে গেলে তার চোখ হয় ক্যামেরা-তে থাকে নাহলে মোবাইলে। বেচারা চর্মচক্ষে কিছু উপভোগ করার সময়-ই পায় না।

কোনকিছু পোস্ট করলেই নিমেষে তা পৌঁছে যাচ্ছে মাল্টিলেভেল ফ্রেন্ডস নেটওয়ার্ক-এ। অমনি নানান স্বাদের, নানান মাপের, নানান রঙের মন্তব্য আর প্রতি-মন্তব্যে সার্থক হয়ে ওঠে সেটা। প্রচুর 'লাইক', 'শেয়ার', আর 'কমেন্ট' - সাফল্যের সেই আস্বাদ উজ্জীবিত করে, অনুপ্রেরণা দেয় পরের পোস্ট-এর। এর ব্যতিক্রম কি আর নেই? পাড়ার শিবু-দা - তার ভাইপোর অনুপ্রেরনায় বেশ দামী একটা মোবাইল কিনে ফেললো শুধুমাত্র 'ফেসবুক' করবে বলে। আজ্ঞে হ্যা 'ফেসবুক' এখন একটা ক্রিয়াপদ হয়ে গেছে।তা যা বলছিলাম - শিবু-দা তো তার প্রথম পোস্ট করেই ফেলল - বাড়ির পোষা বেড়ালের ছবি ওই মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা। কত আশা ছিল সবাই খুব তারিফ করবে। শেষে কিনা মাত্র একটা 'লাইক' - তাও কিনা সেটা তার ওই ভাইপো-র। রাগে, দুঃখে শিবু-দা আর ও-মুখো হননি। ভাইপো অনেক ভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছে ফ্রেন্ড-লিস্টে ফ্রেন্ড না থাকলে 'লাইক' করবে কে? কিন্তু কে শোনে কার কথা।

কিন্তু এ-কথা-ও ঠিক যে এর ফলে মানুষের মধ্যে লেখালিখির বেশ একটা ঝোঁক তৈরী হয়েছে।আর এর থেকে যে বেশ ভালো কিছুও হতে পারে - সেটা কোনো মতেই অস্বীকার করা যায় না। মানুষ খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু জানতে পারছে, শিখতে পারছে, বুঝতে পারছে - তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মাধ্যমে।অদেখা, অচেনা বহু জন-এর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ বাড়ে। নি:সঙ্গ মানুষের সময় কাটে কিছুটা বৈচিত্রের মধ্যে। বিপদে, দরকারে সাহায্য চলে আসে দ্রুত। তাই লেখালিখির সমস্ত নতুন মাধ্যম স্বাগত।বেঁচে থাকুক মানুষের লেখার অভ্যেস।