Friday, October 25, 2019

আসল রত্ন



প্রমোদ ভ্রমণে বেরিয়ে এক আরব বণিক-প্রবর,
হাটের মাঝে দেখতে পেল একখানা উট জবর। 
কভু সে দ্যাখেনি এত সুন্দর অতি মনোহর উট, 
সাচ্চা হীরে, দেখলে লাগে বাকি সবকিছু ঝুট। 
বহু দর করে উট-পসারীরে দিল আশরফি দুই 
প্রফুল্ল মনে বাড়ি ফিরে আসে আরবের ব্যবসায়ী।
মোর সংগ্রহে আছে যত প্রাণী, ছাগ, হয়, উট, মেষ;
সবচেয়ে সেরা এই উট খানি, সন্দেহ নাই লেশ। 
গদি আঁটা এক আসন বাঁধা ছিল যে উটের পিঠে; 
নক্সাকাটা জমকালো খুব, রংটিও বেশ মিঠে। 
ভৃত্যেরে ডেকে বললো বণিক, "খুলে দে আসনখানি,
ভালো করে এরে গোশল করিয়ে খেতে দিস দানাপানি।" 

অনেকদিনের পুরানো বাঁধন, সহজে সে কি রে খোলে?
বহু চেষ্টায় গদিখানা তার খানিক আলগা হলে, 
টেনে ধরে জোরে; পড়ে যায় ভূমে, গদিখানা হাতে নিয়ে,  
সামলে নিজেকে উঠে পড়ে দ্যাখে, এ কি পড়ে আছে ভূঁয়ে? 
গদির তলায় লুকোনো ছিল ছোট মখমলী থলি;
এই ক্ষনে তাই প্রকাশিত হল নজরেতে এল চলি। 
নিশ্চয় প্রভু ভুলে গেছে তার থলিখানি নিতে সনে;  
ভৃত্য মনিবে ডাকে এই ভেবে, জিজ্ঞাসা ভরা মনে।
খোলে থলিখানি খুব সাবধানে, অতি উৎসাহী চিতে;
হাজার আলোর রোশনায়ে চোখ ধাঁধাঁয় আচম্বিতে।
বাকহারা প্রভু - ভৃত্য দুজনে, চমক ঊর্ধগামী;
থলের ভিতর রংবেরঙের রত্ন প্রচুর দামী!
রবির কিরণে ঝকমক করে, ঠিকরে পড়ে আলো,
অসাধারণ রত্নরাজি মনোহর জমকালো!
উত্তেজনায় থরথর কাঁপে হৃদয় উল্লসিত,
একে অপরের মুখপানে চায়, বিস্ময়ে বিহ্বলিত!
"এ ধন আমার নয়", বণিক নীরবতা ভেঙে কয়,
"আসন সহ উট কিনেছি আর কোন কিছু নয়।
এই সম্পদ এখনই ফেরাব উট কিনেছি যেথা"
চললো বণিক হাটের পথে খুঁজে উট বিক্রেতা।
ভীত বিহ্বলিত ভৃত্য ভাবে, মালিক বড্ড বোকা!
"কেউ জানবেনা প্রভু, এ'নয় ইচ্ছাকৃত ধোঁকা।"

না শুনে কোন বারণ, বণিক, সটান হাজির হাটে,
ফেরত দিল মখমলী থলি উট পসারীর হাতে।
উট বিক্রেতা অবাক হয়ে তাকায় দু-চোখ মেলে!
"লুকিয়ে রেখেছি বহুদিন আগে - নিরাপদ গদিতলে।
এ'ধন আমি ভুলে গেছি তাই, উট বেচিবার কালে;
হয়েছি বড়ই খুশী, মহাশয়; ফেরৎ এনেছ বলে।
বেছে নাও তুমি মনের মতন যেকোন একটি রত্ন,
ইনাম না দিলে, সাচ্চা দিলের বাকি থেকে যাবে যত্ন।
বললো বণিক, "উচিত দামে-তে কিনেছি শুধুই উট;
পুরস্কার তো পারবোনা নিতে এইভাবে ঝুটমুট।"
"ছিলনা মনে রত্নের কথা লুকোনো উটের পিছে,  
তুমি না ফেরালে, মহার্ঘ্য ধন বিলকুল হতো মিছে।"
বহু অনুরোধ করে বিক্রেতা পুরস্কারের তরে,
বিনীত বণিক হয়না রাজি, ফেরায় বিক্রেতারে।
অবশেষে, ভীরু লজ্জিত স্বরে বলে, "নিয়েছি দেখে,
সবচেয়ে দামি দুখানি রতন, তব ওই ঝুলি থেকে,
সংকোচে আমি বলতে পারিনি ওগো উট বিক্রেতা!
বিদায় দাও এই বণিকেরে আর বাড়িওনা কথা"
স্তম্ভিত হয় উট বিক্রেতা - বণিকের কথা শুনে;
হাতের থলি উপুড় করে রত্নরাজি গুনে;
বার বার গুনে বুঝিতে না পারে, কেমনে এ সম্ভব?
একটিও হিরে হারায়নি, আছে আগের মতই সব!
"বণিক মশাই বুঝিয়া না পাই, কি নিয়েছ দুই খান?"
লাজুক হেসে বললো বণিক, "সততা ও সম্মান।"

No comments: