Sunday, October 27, 2019

আলাদিনের প্রদীপ

আলাদিন তোর প্রদীপ খানি দিবি?
কাজ ফুরোলেই ফেরত দেব তোরে,
কাজের তরে শহরে গেছে বাবা,
ফেরে যেন দীপালিকার ভোরে।

গায়ে আমার পুরোনো এই জামা,
রংচটা আর অনেক খানি ছেঁড়া,
সবার তরে নতুন পোষাক কিনে,
প্রদীপের জোরে ডিঙোতাম সব বেড়া।

মা'র ভাঁড়ারে বাড়ন্ত যে চাল,
কাল সারাদিন হয়নি ঘরে ভাত,
তোর থেকে ওই প্রদীপ খানি পেলে,
ভরপেট খেয়ে ঘুমোতাম সারা রাত।

দিদি আমার এখনও ফ্রক পরে,
খুব শিগগিরই যাবে শ্বশুরবাড়ী!
থাকলে তোর ওই প্রদীপ আমার কাছে,
পারতো না যেতে এত তাড়াতাড়ি।

ঠাম্মী কত গল্প শোনায় মোরে!
রোজ নিয়ে যায় পক্ষীরাজের দেশে!
বাতের ব্যথায় কাহিল সে যে খুব,
প্রদীপ পেলে সারতো এক নিমেষে।

ছোট্ট মোদের মাটির কুঁড়েঘর,
বর্ষাকালে চাল থেকে জল পড়ে,
থাকতো যদি প্রদীপ আমার কাছে,
অট্টালিকা নিতাম আমি গড়ে।

পথ ঘাট সব বৃষ্টিতে হয় কাদা,
বার হওয়া যে মানা বাড়ির থেকে,
জাদু কার্পেটে চেপে যেতাম উড়ে,
প্রদীপের ওই দত্যি টাকে ডেকে।

প্রদীপটাকে পেতাম যদি হাতে
চাঁদের বুড়ি আসতো আমার বাড়ি
সূর্য তারা-র আলোর পথ ধরে
তার সাথে যে দিতাম চাঁদে পাড়ি

আলাদিন তুই থাকনা আমার সাথে,
আমার ঘরে সারা-জীবন ধরে,
দুজনে মিলে জগৎটাকে গড়ি,
রূপকথার এক স্বর্গ, মাটির 'পরে!

Friday, October 25, 2019

আসল রত্ন



প্রমোদ ভ্রমণে বেরিয়ে এক আরব বণিক-প্রবর,
হাটের মাঝে দেখতে পেল একখানা উট জবর। 
কভু সে দ্যাখেনি এত সুন্দর অতি মনোহর উট, 
সাচ্চা হীরে, দেখলে লাগে বাকি সবকিছু ঝুট। 
বহু দর করে উট-পসারীরে দিল আশরফি দুই 
প্রফুল্ল মনে বাড়ি ফিরে আসে আরবের ব্যবসায়ী।
মোর সংগ্রহে আছে যত প্রাণী, ছাগ, হয়, উট, মেষ;
সবচেয়ে সেরা এই উট খানি, সন্দেহ নাই লেশ। 
গদি আঁটা এক আসন বাঁধা ছিল যে উটের পিঠে; 
নক্সাকাটা জমকালো খুব, রংটিও বেশ মিঠে। 
ভৃত্যেরে ডেকে বললো বণিক, "খুলে দে আসনখানি,
ভালো করে এরে গোশল করিয়ে খেতে দিস দানাপানি।" 

অনেকদিনের পুরানো বাঁধন, সহজে সে কি রে খোলে?
বহু চেষ্টায় গদিখানা তার খানিক আলগা হলে, 
টেনে ধরে জোরে; পড়ে যায় ভূমে, গদিখানা হাতে নিয়ে,  
সামলে নিজেকে উঠে পড়ে দ্যাখে, এ কি পড়ে আছে ভূঁয়ে? 
গদির তলায় লুকোনো ছিল ছোট মখমলী থলি;
এই ক্ষনে তাই প্রকাশিত হল নজরেতে এল চলি। 
নিশ্চয় প্রভু ভুলে গেছে তার থলিখানি নিতে সনে;  
ভৃত্য মনিবে ডাকে এই ভেবে, জিজ্ঞাসা ভরা মনে।
খোলে থলিখানি খুব সাবধানে, অতি উৎসাহী চিতে;
হাজার আলোর রোশনায়ে চোখ ধাঁধাঁয় আচম্বিতে।
বাকহারা প্রভু - ভৃত্য দুজনে, চমক ঊর্ধগামী;
থলের ভিতর রংবেরঙের রত্ন প্রচুর দামী!
রবির কিরণে ঝকমক করে, ঠিকরে পড়ে আলো,
অসাধারণ রত্নরাজি মনোহর জমকালো!
উত্তেজনায় থরথর কাঁপে হৃদয় উল্লসিত,
একে অপরের মুখপানে চায়, বিস্ময়ে বিহ্বলিত!
"এ ধন আমার নয়", বণিক নীরবতা ভেঙে কয়,
"আসন সহ উট কিনেছি আর কোন কিছু নয়।
এই সম্পদ এখনই ফেরাব উট কিনেছি যেথা"
চললো বণিক হাটের পথে খুঁজে উট বিক্রেতা।
ভীত বিহ্বলিত ভৃত্য ভাবে, মালিক বড্ড বোকা!
"কেউ জানবেনা প্রভু, এ'নয় ইচ্ছাকৃত ধোঁকা।"

না শুনে কোন বারণ, বণিক, সটান হাজির হাটে,
ফেরত দিল মখমলী থলি উট পসারীর হাতে।
উট বিক্রেতা অবাক হয়ে তাকায় দু-চোখ মেলে!
"লুকিয়ে রেখেছি বহুদিন আগে - নিরাপদ গদিতলে।
এ'ধন আমি ভুলে গেছি তাই, উট বেচিবার কালে;
হয়েছি বড়ই খুশী, মহাশয়; ফেরৎ এনেছ বলে।
বেছে নাও তুমি মনের মতন যেকোন একটি রত্ন,
ইনাম না দিলে, সাচ্চা দিলের বাকি থেকে যাবে যত্ন।
বললো বণিক, "উচিত দামে-তে কিনেছি শুধুই উট;
পুরস্কার তো পারবোনা নিতে এইভাবে ঝুটমুট।"
"ছিলনা মনে রত্নের কথা লুকোনো উটের পিছে,  
তুমি না ফেরালে, মহার্ঘ্য ধন বিলকুল হতো মিছে।"
বহু অনুরোধ করে বিক্রেতা পুরস্কারের তরে,
বিনীত বণিক হয়না রাজি, ফেরায় বিক্রেতারে।
অবশেষে, ভীরু লজ্জিত স্বরে বলে, "নিয়েছি দেখে,
সবচেয়ে দামি দুখানি রতন, তব ওই ঝুলি থেকে,
সংকোচে আমি বলতে পারিনি ওগো উট বিক্রেতা!
বিদায় দাও এই বণিকেরে আর বাড়িওনা কথা"
স্তম্ভিত হয় উট বিক্রেতা - বণিকের কথা শুনে;
হাতের থলি উপুড় করে রত্নরাজি গুনে;
বার বার গুনে বুঝিতে না পারে, কেমনে এ সম্ভব?
একটিও হিরে হারায়নি, আছে আগের মতই সব!
"বণিক মশাই বুঝিয়া না পাই, কি নিয়েছ দুই খান?"
লাজুক হেসে বললো বণিক, "সততা ও সম্মান।"

Monday, October 21, 2019

মনের রঙ

দাদু বলে আমার নাকি অবুঝ সবুজ মন;
প্রজাপতি, ফড়িং ধরি, 
ধুলো, বালির কেল্লা গড়ি,
সবুজ গহন মনের মাঝে লুকিয়ে গুপ্তধন! 

ঠাম্মি বলে মনটা আমার এক্কেবারে সাদা 
রাজকন্যার গল্প শুনে 
পাতালপুরী, সাগর, বনে 
হটাৎ করে কখন যেন ঘুমিয়ে যে হই কাদা। 

ছোট্ট দিদি নালিশ করে মনটা আমার কালো; 
আমি নাকি ঝগড়া করি, 
ভাবের থেকে বেশি আড়ি, 
সবার চেয়ে দস্যি তবু সবাই বাসে ভালো! 

বাবা বলে মনটা আমার আকাশের মত নীল;
মনের মাঝে সদা কেন, 
ভাসে অলীক স্বপ্ন, যেন 
আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়ায় পায়রা, শালিক, চিল। 

মায়ের কাছে মনটা আমার রাঙা রবির মত;
একগুঁয়ে আর বড্ড রাগী 
সবাইকে খুব ব্যস্ত রাখি 
না ঘুমোলে আমায় সওয়া শক্ত জানো কত? 

সবার কথা শুনে ভাবি; রঙিন আমার মন, 
কিন্তু আমি পাই না খুঁজে, 
কোনো রংই দেখি না যে, 
কেমন করে দেখতে পাবো মনের গহীন কোন!  

Tuesday, October 08, 2019

অসুরদলনী

দুর্গতিনাশিনী তুই আবার আসিস মা;
ছেলে, মেয়ে, বাহন সঙ্গে নিয়ে;
অসুরটাকে খুব কি তোর দরকার?
পরের বারে আসিস বিদেয় দিয়ে।

এই সমাজে দেখি অসুর যত;
বহাল তবিয়তে আছে তারা।
উদ্যত তোর ত্রিশূলখানির ঘায়ে
একজনও কেউ যায়না কেন মারা?

বাজিয়ে ঢাক, জ্বালিয়ে ধুপ আর ধুনো,
যারা তোরে বছর বছর পূজে;
তাদের ভিড়েই লুকিয়ে সকল অসুর
কেন তাদের পাসনে মা তুই খুঁজে?

লুঠছে অসুর নিজের মাতৃভূমি,
দুর্নীতিতে ফোঁপরা করে দেশ,
ধর্মান্ধতা-বিষ ছড়িয়ে অসুর
শান্তি, মৈত্রী জ্বালিয়ে করে শেষ।

জাতপাতের বিভেদ-প্রাচীর তুলে,
মানবতার লাঞ্ছনা দেখি কত;
অসুরেরাই ভোগ করে বসুধা
সত্ত্ব-গুণের লাঞ্ছনা অবিরত।

লাঞ্ছিত করে, পাচার করে শিশু,
নাবালিকা, নারী; নেই কোন মনঃতাপ;
পণের দাবিতে পুড়িয়ে মারে বধূ
ঘরে ঘরে দেখি অসুরেতে ছয়লাপ।

কন্যা ভ্রূণের হত্যালীলা চলে,
নবজাতিকারে ত্যাজে, অথবা মারে;
বুড়ো বাবা মা-র শেষ সম্বল কাড়ে,
অসুরেরা দেখি ফিরে আসে বারে বারে

যাওয়ার আগে এই বর দে মাগো,
প্রতি ঘরেই দুর্গা যেন জেতে;
আসছে বারে তোর পুজোতে যেন
সকল দুর্গা উঠতে পারে মেতে।

সবার মনের অসুরগুলো মরুক,
সদ্ভাবনার ত্রিশূল-আঘাত পেয়ে,
এই আশাতেই পরের বারের তরে,
রইব মোরা তোর পানেতে চেয়ে।