Monday, January 13, 2014

লেখা-লিখি

অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম আনেকদিন কিছু লেখা হয়নি।কিছু একটা লিখি।কিন্তু কি লিখবো সেটাই ঠিক করতে পারছিলাম না। যারা স্বভাব-লিখিয়ে তারা তো ইচ্ছে হলেই জম্পেশ লিখে ফ্যালে।অনেক-টা মেসে থাকা বেকার ব্যাচেলর ছেলের খাওয়া আর ঘুমোনো-র মতো। 

আজকাল অবশ্য ওইসব স্বভাব লিখিয়েদের সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য, বা ঠিক পাল্লা না দিলেও একটা মোটামুটি প্রতিযোগিতা-য় ফেলে দেওয়ার জন্য কিছু উপায় এসে গেছে। ঠিক-ই ধরেছেন - আমি ওই 'ব্লগ', 'টুইটার', 'ফেসবুক' এইসবের কথাই বলছি।এগুলো-তে লোকে আজকাল ঠিক কি-ই যে না লিখছে তা বলা বা বোঝা খুব মুশকিল।সারা পৃথিবীর কয়েক কোটি মানুষ একসাথে লিখছে, লিখে-ই যাচ্ছে। অবশ্য তাদের বেশির ভাগ পড়ার উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। 

"আমি লিখতে খুব ভালোবাসি। প্রতিদিন প্রায় ৩ ঘন্টা লিখি - মেইন-লি ফেসবুক আর টুইটার-এ"
 

বিভিন্ন গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, কবিতা, গবেষনা, খবর ইত্যাদি তো আছে-ই। মানুষ তার প্রতি মুহুর্তের নানা রকম অভিজ্ঞতা : ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ভয় পাওয়া, খানা-পিনা, বেড়ানো, সিনেমা দেখা, গান শোনা, বই পড়া, খেলাধুলো, অসুখ-বিসুখ, সমস্যা- সমাধান, আইন-আদালত, পাপ-পুণ্য, আদেশ-উপদেশ, হাসি-ঠাট্টা, বনধ-হরতাল, আন্দোলন-অবরোধ, কলহ-ঝগড়া, প্রেম-বিরহ, এমনকি হারানো-প্রাপ্তি, বিবাহ-বিচ্ছেদ কিছুই বাকি নেই - বিষয় বৈচিত্রের কোনো শেষ নেই - অফুরান উতসাহে লিখে যাচ্ছে - প্রায় রিয়েল-টাইম।সকালে কাগজওয়ালা কাগজ দেয়নি, বাড়ির ঠিকে ঝি আসেনি, দুধওয়ালা দুধ দেয়নি, অটো-তে দু-টাকা গচ্চা গেছে খুচরো না থাকায়, ট্রাফিক সিগন্যাল-এ গান শুনে মেজাজ বিগড়ে গেছে, নরেন্দ্র মোদী না রাহুল গান্ধী, নাকি অরবিন্দ কেজরিওয়াল - কে এবার প্রধান-মন্ত্রী হবে, অফিস-এ পারফরমেন্স-রেটিং ভাল হয়নি, তাই 'বস'-এর মুন্ডু-পাত, অকারণে ট্রাফিক সিগনালে কেস খাওয়া, সেই কবেই 'ফ্ল্যাট' বুক করেছেন কিন্তু প্রোমোটার এখনো পজেশন দেয়নি, 'ট্রাভেল রেডি' কিন্তু 'অনসাইট অপরচুনিটি' পাচ্ছি না, এরকম আরো কত কিছু - জীবন যাপনের যাবতীয় খুঁটিনাটি - সে যত-ই ছোট বা তুচ্ছ হোক না কেন - সব-ই এখন পোস্ট হয়ে যায়।নানান আচার অনুষ্ঠান-এর নিমন্ত্রন-ও আজকাল অনলাইন-এ হয়ে যাচ্ছে। আমার এক সহকর্মী তো তার বিয়ের সচিত্র ধারাবিবরণী দেওয়া শুরু করেছিলো। রক্ষে যে 'হানিমুন'-এর আগেই তাকে থামানো গেছে। নাহলে গিনেস বুক-এ নাম-টা পাক্কা উঠত; উঠতই।

ক্যামেরা, মোবাইলের বিক্রি-ও হু-হু করে বেড়ে গেছে।ডিজিটাল ক্যামেরা-তে আটকে না থেকে এখন 'এস-এল-আর'-এ মনোনিবেশ করেছে। বেসিক ফোন ছেড়ে স্মার্ট ফোনের বাজার।আগে লোকে বেড়াতে যেত ছুটি কাটাতে, শরীর সারাতে বা নতুন কিছু দেখার নেশায়। এখন অধিকাংশ-ই হয় অনলাইন পোস্ট করার জন্য।আমি কি দেখছি সেটা খুব একটা কাজের কথা নয়, বাকিরা দেখুক আমি কি দেখছি।আমার এক বন্ধু বেড়াতে গেলে তার চোখ হয় ক্যামেরা-তে থাকে নাহলে মোবাইলে। বেচারা চর্মচক্ষে কিছু উপভোগ করার সময়-ই পায় না।

কোনকিছু পোস্ট করলেই নিমেষে তা পৌঁছে যাচ্ছে মাল্টিলেভেল ফ্রেন্ডস নেটওয়ার্ক-এ। অমনি নানান স্বাদের, নানান মাপের, নানান রঙের মন্তব্য আর প্রতি-মন্তব্যে সার্থক হয়ে ওঠে সেটা। প্রচুর 'লাইক', 'শেয়ার', আর 'কমেন্ট' - সাফল্যের সেই আস্বাদ উজ্জীবিত করে, অনুপ্রেরণা দেয় পরের পোস্ট-এর। এর ব্যতিক্রম কি আর নেই? পাড়ার শিবু-দা - তার ভাইপোর অনুপ্রেরনায় বেশ দামী একটা মোবাইল কিনে ফেললো শুধুমাত্র 'ফেসবুক' করবে বলে। আজ্ঞে হ্যা 'ফেসবুক' এখন একটা ক্রিয়াপদ হয়ে গেছে।তা যা বলছিলাম - শিবু-দা তো তার প্রথম পোস্ট করেই ফেলল - বাড়ির পোষা বেড়ালের ছবি ওই মোবাইলের ক্যামেরায় তোলা। কত আশা ছিল সবাই খুব তারিফ করবে। শেষে কিনা মাত্র একটা 'লাইক' - তাও কিনা সেটা তার ওই ভাইপো-র। রাগে, দুঃখে শিবু-দা আর ও-মুখো হননি। ভাইপো অনেক ভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছে ফ্রেন্ড-লিস্টে ফ্রেন্ড না থাকলে 'লাইক' করবে কে? কিন্তু কে শোনে কার কথা।

কিন্তু এ-কথা-ও ঠিক যে এর ফলে মানুষের মধ্যে লেখালিখির বেশ একটা ঝোঁক তৈরী হয়েছে।আর এর থেকে যে বেশ ভালো কিছুও হতে পারে - সেটা কোনো মতেই অস্বীকার করা যায় না। মানুষ খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু জানতে পারছে, শিখতে পারছে, বুঝতে পারছে - তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মাধ্যমে।অদেখা, অচেনা বহু জন-এর সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ বাড়ে। নি:সঙ্গ মানুষের সময় কাটে কিছুটা বৈচিত্রের মধ্যে। বিপদে, দরকারে সাহায্য চলে আসে দ্রুত। তাই লেখালিখির সমস্ত নতুন মাধ্যম স্বাগত।বেঁচে থাকুক মানুষের লেখার অভ্যেস।

5 comments:

Weblogger Prasun said...

বাঃ। বেশ ভালই লাগলো। কিন্তু তোর ব্লগ এ ফলো করার কোনো অপশন পেলাম না। আক্টিভেট করে দিস। টাচ এ থাকা যাবে।

Pradipta said...

Nice, keep it up - write regularly.

pran said...

Bah - bes valo laglo - kichu khon nijer mone haslam. Waiting for your upcoming post. :)

Kalyan said...

সবাইকে ধন্যবাদ - ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো।

Kalyan said...

প্রসূন - এই পেজ-এর রাইট-টপ কর্নার-এর 'ফলো' বাটন আছে।